২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা ব্যয় হবে ঋণের সুদ, ভর্তুকি-প্রণোদনা ও সরকারি চাকুরেদের বেতন-পেনশন পরিশোধে। এ অর্থ মোট বাজেটের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। এর মধ্যে বেতন ও ভাতা বাবদ খরচ হবে ৬৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। দেশি-বিদেশি সুদ পরিশোধে ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা, পেনশন ও গ্র্যাচুইটি বাবদ ২৭ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা। ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ ৩৮ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ বেতন-ভাতা, সুদ পরিশোধ, পেনশন, গ্র্যাচুইটি ও ভর্তুকি বাবদ মোট খরচ হবে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের চেয়ে এসব খাতে আগামী বছরে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ১৯ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
সূত্রমতে, আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয়ের তিনটি খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হবে বেতন-ভাতা ও পেনশন খাতে, ৯৬ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেতন-ভাতায় ব্যয় হবে ৬৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন বাবদ ২৭ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। কর্মকর্তাদের বেতন বাবদ ১১ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে। কর্মচারীদের পেছনে ব্যয় হবে ২৫ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা, বিভিন্ন ভাতা বাবদ ৩১ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা।
সরকার প্রতিবছরই বাজেট ঘাটতি পূরণে দেশ-বিদেশ থেকে ঋণ নেয়। অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে ঋণ নেওয়া হয় ব্যাংকিং খাত, সঞ্চয়পত্র ও বন্ড থেকে। এসব ঋণের বিপরীতে প্রতিবছর সরকারকে বড় অঙ্কের সুদ গুনতে হয়। ফলে বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বরাদ্দ রাখা হয় শুধু পরিশোধ খাতে। আগামী অর্থবছরে সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হবে ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ পরিশোধ করতে হবে ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরে সরকার ৩৮ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকার প্রণোদনা ও ভর্তুকি বাবদ খরচ করবে। এর মধ্যে কৃষি খাতে ৯ হাজার ৫০১ কোটি টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৪ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা, জনশৃঙ্খলা খাতে ৮৭৪ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষা খাতে ৪৮৭ কোটি টাকা, জনপ্রশাসনে ২২ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষণের চেয়ারপারসন অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ার কারণে রাজস্ব আয় কমবে। তখন প্রাধান্য হওয়া দরকার অহেতুক ব্যয় কমানো। ইতোমধ্যে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা থেকে এক লাখ কোটি টাকার ঘাটতি হবে। অন্যদিকে করোনার কারণে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ও সংস্কারের যৌক্তিক দাবি উঠেছে। কিন্তু গতানুগতিক কায়দায় বাজেট প্রাক্কলন করায় অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বাড়ছেই। সঙ্গত কারণে বেতন-ভাতা, যানবাহন ক্রয়, বিদেশ ভ্রমণ ইত্যাদিতে লাগাম টানার প্রয়োজন ছিল। একইভাবে যেসব খাতে ভর্তুকির প্রয়োজন নেই সেসব খাতে ভর্তুকি হ্রাস করা প্রয়োজন।
Leave a Reply